বিদ্যালয়ের প্রারম্ভ:
কখন, কীভাবে এবং কোন তারিখে অত্র প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল তার সঠিক দিন-তারিখ পাওয়া যায় না। সময়ের আবর্তনে প্রাচীন সব নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ১৮৭৪ সালে এখানে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্রে এ সালটি পাওয়া যায়। তবে প্রাইমারী বা হাইস্কুল রূপে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয় নি। প্রাচীন ব্যক্তিবর্গের জবানী এবং বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বুকের পরিদর্শকের মন্তব্য থেকে জানা যায় যে, সূচনালগ্নে এটি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একথা স্বীকার্য যে, প্রাচীনকালে তথা ষোড়শ/অষ্টাদশ শতকে এদেশে প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হত মাদ্রাসা-মক্তব, চতুস্পাঠী টোল ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই সেদিন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা এ স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শিক্ষা প্রসারের প্রয়াস পেয়েছিলেন। সে কালের মাদ্রাসা বর্তমান কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। ১০ বিঘা ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা পরবর্তীতে M.E বা Middle English Schoolএ পরিণত হয়েছিল।

মিডল ইংলিশ স্কুল:
প্রায় ৩০ বছরাধিক মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন থাকার পর ক্রমে ইংরেজ শাসনের প্রভাব ও বাংলা চর্চার অগ্রগতি হলে স্থানীয়ভাবেও রেনেসাঁর প্রভাব পড়ে। ক্রমে জনগণ বাংলা ও ইংরেজী শিক্ষার দিকে আগ্রহী হন। তাই স্থানীয় জনগনের আগ্রহে ও তৎকালীন সরকারী প্রভাবে মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে Middle English Schoolনামকরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরম্ন করা হয়। খুব সম্ভবত এটি ১৯০৮ সালের দিকে। এ তথ্য বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের প্রকাশিত ১৯৯৯ সালের ‘স্মৃতিচিহ্ন’ প্রকাশনায় এবং বিদ্যালয়ের কিছু নথিপত্রে পরিলক্ষিত হয়। উল্লেখ্য যে, তখন থেকে বিদ্যালয়টি সরকারীভাবে পরিচালিত হত।

মিডল ইংরেজী বিদ্যালয়ে প্রাইমারী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দান করা হত। বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, ফারসী, পালি, সংস্কৃত ইত্যাদি বিষয়ের উপরও শিক্ষাদান করা হত। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে প্রাইমারী শিক্ষাদানের জন্য ২ জন আলাদা শিক্ষক ছিলেন বলেও জানা যায়, তখন বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কমিটি সদস্যবৃন্দ ছিলেন-
সভাপতি- Mr. A.W. Harris, S.D.O কক্সবাজার।
সেক্রেটারী- Mr. A.K. Ghosh-Khas Tahashildar
সদস্য সংখ্যা- ৮ জন।

মূলত: খাস তহশিলদার মি: A.K. Ghosh এর সর্বিক উদ্যোগ অর্থসংগ্রহে এবং নিজের তহবিল থেকে অর্থ দানে এ সময় বিদ্যালয়টির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হত। এটি বিদ্যালয় পরিদর্শন বহিতে বিভিন্ন পরিদর্শক বৃন্দ তাঁদের মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন। ৬/০৬/১৯২৩ সালের পরিদর্শন বহিতে বিদ্যালয় পরিদর্শক মন্তব্য করেছিলেন, “বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।” খাস তহশিলদারের এহেন ভূমিকার জন্যই শতবর্ষ পরেও তিনি স্মরণীয়, বরণীয়।

Middle স্কুলে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের পদবী ছিল নিম্নরূপ:
১। Headmaster
২। 2nd Master
৩। 3rd Master
৪। 4th Master (Persiand and Arabic)
৫। 5th Master- PALI
তখন শিক্ষকবৃন্দের বেতন ছিল ৫০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।

ক্রমে শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ও আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়াইয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হতে থাকে। তাই মডেল ইংরেজী বিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপদানের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ সক্রিয় হন। ক্রমে দাবী সরকারের নিকট পৌঁছালে ১৯২৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক জনাব আহসান উল্লাহ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বিদ্যালয় পরনিদর্শনে আসেন। বিদ্যালয়ের Visitor’s Book’-এর ৯ পৃষ্ঠায় তাঁর দীর্ঘ মন্তব্য রয়েছে। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে M.E.স্কুলকে H.E স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক Matriculation পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পাওয়া যায়।

Higher English School প্রতিষ্ঠা: উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারী। তৎকালীন S.D.O.Mv. A.WHarris বিকাল ২ টায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ঐ.ঊ. স্কুলের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। সেদিন থেকে M.E স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়ে H.E স্কুলে পরিণত হয়। Visitor’s Book-এর ২য় পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে।

ঐ দিনই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নিমিত্তে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এছাড়া M.E স্কুলের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং শিক্ষকবৃন্দকে H.Eস্কুলে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। H.E.স্কুল পরিচালনা কমিটি নিম্নরূপ ছিল:

১। A.W. Harris- S.D.O – সভাপতি।
২। A.K. Ghosh- (খাস তহসিলদার) – সেক্রেটারী
৩। প্রধান শিক্ষক – সদস্য।
৪। শিক্ষক প্রতিনিধি-সদস্য।
৫। মি: বিপিন বিহারী রÿÿত (পৌর চেয়ারম্যান) – সদস্য।
৬। জেলা স্কুল পরিদর্শক – সদস্য।
৭। জনাব মৌলভী মেহের আলী (B.L) – সদস্য।
৮। জনাব মৌলানা মোজাফ্ফর আহমদ (জমিদার) – সদস্য।
৯। বাবু শরৎ চন্দ্র পাল (B.L) – সদস্য।
১০। মি: মংসুজাউ (ব্যবসায়ী) – সদস্য।

H.E.স্কুলে যাঁরা শিক্ষক ছিলেন তাঁদের একটি তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল এবং সাথে তাঁদের তৎকালে প্রদত্ত বেতনও উল্লেখ করা হল:

১। জনাব মৌ: গোলাম রহমান – প্রধান শিক্ষক – ৭০/-
২। বাবু যামিনী রঞ্জন চৌধুরী – সহকারী শিক্ষক – ৫০/-
৩। বাবু হিমাংশু বিমল ভট্টাচার্য্য – সহকারী শিক্ষক – ৪০/-
৪। জনাব মৌ: সুলতান আহমদ – সহকারী শিক্ষক – ৪০/-
৫। বাবু জিতেন্দ্র লাল দাস – সহকারী শিক্ষক – ২০/-
৬। জনাব মৌ: রফিউল কাদের – শিক্ষক/কেরানী – ২০/-
৭। বাবু হরিকৃষ্ণ চৌধুরী – সংস্কৃত পন্ডিত – ২৫/-
৮। জনাব মৌ: মুহাম্মদ আবদুল জববার – হেড মৌলভী – ২৫/-
৯। বাবু জীবন কৃষ্ণ সাহা – ২য় পন্ডিত – ২৫/-
১০। বাবু ভগীরত বড়ুয়া – পালি শিক্ষক – ২০/-
১১। জনাব মুন্সী মকবুল বারী – ৩য় পন্ডিত – ১৫/-
১২। জনাব মৌলভী মকবুল আহমদ – ২য় মৌলভী – ১৫/-
১৩। বাবু প্রিয় মোহন মজুমদার – বার্মিজ ভাষা – ২০/-

এ ১৩ জন শিক্ষক নিয়ে ঐ.ঊ. স্কুলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলতেছিল। তখন নিম্নোক্ত কর্মচারী বিদ্যালয়ে ছিল:

১। চাকর – ২ জন – ৮ ×২ = ১৬/-
২। সুইপার – ১ জন – ৪/-

শ্রেণী কক্ষ ও দালান:
H.E.স্কুল প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ে ৩টি দালান ছিল বলে জানা যায়। ৩টি দালানে ১১টি শ্রেণী কক্ষ, ১টি প্রধান শিক্ষক কক্ষ, ১টি পাঠাগার এবং শিক্ষকদের জন্য ১টি কক্ষ বরাদ্ধ ছিল।

সাগর সৈকত গিরি-পর্বত নির্ঝরিণী সিঞ্চিত ও মনোরম প্রাকৃতিক রম্য-হর্ম্যে ভরপুর কক্সবাজার। Captain Cox-এর কক্সবাজার সু-প্রাচীন কালের নৈসর্গিক তথা অপার সমুদ্র তটের বিচিত্র সম্পদ ভান্ডারের ঢালি নিয়ে সবাইকে বিমোহিত ও স্তম্ভিত করে আসছে। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকত তটের মনি কৌঠায় অবস্থিত বর্তমান এ কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠাতাগণ সুদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম সমতল স্থান তথা কক্সবাজার পৌরসভার নাভিতটে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন। এটি তাঁদের দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার ফসল বৈকি। স্থানটি সেদিন চতুর্দিক জঙ্গলাকীর্ণ ছিল বটে, যোগাযোগের ও জ্ঞান সাধনার জন্য ছিল অপূর্ব। বিশাল এলাকা নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা করে ক্রমে এর কর্মশক্তি দেশ-ব্যাপী বিধৃত। কয়েকবার জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ এবং সর্বাধিক সুনাম-সুখ্যাতিতে বিদ্যালয়ের গৌরব গাঁথা কিংবদন্তী হয়ে সকলকে বিমোহিত করে আসছে। তাই বিদ্যালয়ের সূচনাকারী, প্রাচীন শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্র তথা কক্সবাজার জেলার এ বিদ্যালয়ের সংশিস্নষ্টজন এ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গৌরব বোধ করেন।

হোস্টেল ব্যবস্থাপনা:
তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জেলাব্যাপী শিক্ষা সম্প্রসারণের নিমিত্তে বিদ্যালয় অঙ্গণে হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছিল। সকল ধর্মের ছাত্রদের লেখাপড়ার ও থাকার ব্যবস্থার নিমিত্তে মোহামেডান হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেল ও বৌদ্ধ হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্কুলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছাত্ররা হোস্টেলে অবস্থান করে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিল। ইহা তৎকালীন কমিটির দূরদর্শিতার বহি:প্রকাশ। বহু বৎসর এ হোস্টেল ব্যবস্থা চালু ছিল। পরবর্তীতে বিলুপ্ত হলেও বর্তমানে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল থেকে আবার সীমিত আকারে সাধারণ হোষ্টেল চালু হয়েছে।

ছাত্র সংখ্যা ও প্রথম ম্যাট্রিকুলেশান:
H.E. স্কুল প্রতিষ্ঠার পর পরিদর্শন রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯২৪-২৫ সালের দিকে এ English High School-এর ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৮৬ জন। এ হাইস্কুল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়ে ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম ৬ জন ছাত্রকে ম্যাট্রিকুলেশান পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম পাঠায়। তন্মধ্যে ৪ জন ১ম বিভাগে এবং ১ জন ২য় বিভাগে পাশ করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ফলে বিদ্যালয়ের সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২৬ সালের ২২ জানুয়ারীর পরিদর্শন রিপোর্টে দৃষ্ট হয় যে, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছিল। তন্মধ্যে মুসলিম ছাত্র ৯৯ জন, হিন্দু ৯৬ জন, রাখাইন ৩৭ জন, বড়ুয়া ০৬ জন এবং চাকমা ছিল ০২ জন।

জেলার প্রথম হাইস্কুল:
বর্তমান কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়-ই হচ্ছে অত্র জেলার প্রথম হাইস্কুল। ইতিপূর্বে কক্সবাজার সদর হতে ১৫ কি:মি: দূরে রামুতে প্রথম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে ব্রিটিশ সময়ে অসহযোগ আন্দোলন কালে রাজনীতির মারপ্যাচে পড়ে ঐ স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই প্রাচীন স্কুলের আসবাবপত্র ও পাঠাগারের গ্রন্থ সমূহ অত্র বিদ্যালয়ের পাঠাগারে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং রামু স্কুলের নম্বর ও সীলসহ পুস্তকগুলো পাঠাগারে পরিদৃষ্ট হয়। তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক বাবু বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য অত্র বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বইতে মন্তব্য করেছেন, “১৯২৮ – ২৯ সালের দিকে অত্র মহকুমায় এটি ছাড়া আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না”। সুতরাং, H.E স্কুলই প্রথম উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত।

অত্র বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বহিতে আরো দেখা যায়, তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক জনাব আবদুল গণি ১৯৩৪ সালে অত্র বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি পরিদর্শন বহির ৫১ পৃষ্ঠায় মন্তব্যে লিখেছিলেন- “অত্র মহকুমার দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৪ সালে এবং তা চকরিয়াতে। স্কুলের নাম ছিল কাকারা উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমান চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টি- পূর্বে কাকারা উচ্চ বিদ্যালয় নামে ছিল বলে জানা যায়। ১৯৪০ সালের দিকে ক্রমে মহকুমায় উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাদ্রাসা মিডল-ইংলিশ স্কুলে, মিডল-ইংলিশ স্কুল- হাই স্কুলে এবং হাই-ইংলিশ স্কুল ১৯৫২-৫৩ সালের দিকে কক্সবাজার মডেল হাইস্কুল নামধারণ করেছিল এবং জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত এ নামেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছিল।

জাতীয়করণ:
বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী জানা যায়, ১৯৭০ সালে এটি বেসরকারী থেকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। ৬.১৫ একর ভূমিতে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের ক্রমে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সঠিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করাতে হয়। লÿ্যণীয় যে, বর্তমানে ছাত্ররা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার দিকে অত্যধিক ঝুকে পড়েছে। ফলে বর্তমানে এ স্কুলে মানবিক শাখা নেই। বর্তমানে দুই শিফ্ট চালু হওয়ায় ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের নাম:

বেসরকারী আমল: ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত।
০১। জনাব গোলাম রহমান- এম.এ.
০২। বাবু প্রমথ ওয়ার্দেদার।
০৩। বাবু যামিনী রঞ্জন চৌধুরী – বি.এ.বি.টি।
০৪। বাবু অমিয় কুমার বড়ুয়া- এম.এ.বি.এল।
০৫। বাবু মাজহারম্নল হক- বি.এ. (গোল্ড মেডেলিষ্ট) বি.বি.এড.।

সরকারী আমল:
১। জনাব মাজহারম্নল হক- বি.এ.বি.বিটি- ০১/০২/৭০-৩১/০১/৭১।
২। জনাব আবদুল কাদের (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এ.বি.এড- ০১/০২/৭১-০২/০৭/৭১।
৩। জনাব জালাল উদ্দিন- বি.এ.বি.সি. এম.এড (যুক্তরাষ্ট্র)- ০৩/০৭/৭১-২২/০১/৭৪।
৪। জনাব আজিজুল্লাহ- বি.এম.সি.বি.এড (১ম)- ২৩/০১/৭৪-১১/০২/৭৭।
৫। জনাব আবদুল কাদের (ভারপ্রাপ্ত)- ১২/০২/৭৭-২৪/০২/৭৭।
৬। জনাব বীরেন্দ্র লাল দাস- এম.এ. বি.এস.সি (ডিসটিংকশান), বি.টি. এম. ( শিক্ষা) ১ম কাব্যতীর্থ- ২৫/০২/৭৭-১৫/০২/৭৮।
৭। জনাব আবদুল কাদের (ভারপ্রাপ্ত)- ১৬/০২/৭৮-১৬/০৭/৭৯।
৮। জনাব কামাল উদ্দিন আহমদ তালুকদার- বি.এস.সি.এম.এড (ফিলিপাইন), ১৭/০১/৭৯-০২/০১/৮১।
৯। জনাব আবদুল কাদের (ভারপ্রাপ্ত)- ০৩/০১/৮১-১৫/১১/৮১।
১০। জনাব আবদুল কাদের- বি.এ.বি.এড, বি.ই.এস- ১৬/১১/৮১-০১/০১/৮৭।
১১। জনাব মোমতাজ আহমদ (ভারপ্রাপ্ত)- ০২/০১/৮৭-০৬/০৪/৮৯।
১২। জনাব মোমতাজ আহমদ- বি.এ.বি.এড, বি.সি.এস শিক্ষা- ০৭/০৪/৮৯-৩০/১০/৯৩।
১৩। জনাব আকতার কামাল (ভারপ্রাপ্ত)- ৩১/১০/৯৩-২১-০১-৯৪।
১৪। মিসেস সবিতা দত্ত- বিএ.বি.এড, বি.সি.এস শিক্ষা- ২২/০১/৯৪-১২/০১/৯৫।
১৫। জনাব আকতার কামাল (ভারপ্রাপ্ত)- ১৩/০১/৯৫-০৫/০৬/৯৫।
১৬। জনাব সুনীল চন্দ্র পাল (ভারপ্রাপ্ত)- এম.এ ইংরেজী, বি.সি.এস শিক্ষা- ০৬/০৬/৯৫-১০/০৩/৯৮।
১৭। জনাব ননী গোপাল- এম.এ.বি.এড, বি.সি.এস শিক্ষা- ১১/০৩/৯৮-২৫/০১/৯৯।
১৮। জনাব আকতার কামাল (ভারপ্রাপ্ত)- ২৬/০১/৯৯-১৭/০২/৯৯।
১৯। বাবু সুনীল চন্দ্র পাল- ১৮/০২/৯৯-০৩/০২/২০০০।
২০। জনাব আকতার কামাল (ভারপ্রাপ্ত)- ১০/০২/২০০০-০৭/০৬/২০০০।
২১। জনাব এ.জি. এমডি সালাউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত)- ০৮/০৬/২০০০-০৬/০৭/২০০০।
২২। বাবু জহর লাল ধর- বি.এস.সি -০৭/০৭/২০০০-০১/০৪/০২।
২৩। জনাব এ.জি.এমডি সালাউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এড -০২/০৪/০২-১৭/০১/০৪।
২৪। জনাব এম.এম. সিরাজুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এস.সি.বি.এড, এল.এল.বি -১৮/০১/০৪ -০৭/০৭/০৪।
২৫। মিসেস উম্মে হাবিবা খানম (ভারপ্রাপ্ত)- এম.এ.বি.এড, বি.সি.এস- ০৮/০৭/০৪-১৮/০৩/০৭।
২৬। বাবু দেবব্রত দাশ- বি.কম.অনার্স, এম.কম, বি.এড, বি.সি.এস- ২৮/০৩/০৭-১০/০৩/০৮।
২৭। জনাব আমেনা খাতুন (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এ.বি.এড (১ম শ্রেণী)- ১১/০৩/০৮-০৪/১০/০৮।
২৮। বাবু রনজিত কুমার দে (চলতি দায়িত্বে)- ০৫/১০/০৮-২৯/১০/০৮।
২৯। বাবু বোধি মিত্র বড়ুয়া (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এ.এল.এল.বি, সুত্ত ও অভিধর্ম বিশারদ- ৩০/১০/০৮ -১৭/১১/০৮।
৩০। জনাব আমেনা খাতুন (ভারপ্রাপ্ত)- ১৮/১১/০৮-১২/০১/০৮।
৩১। জনাব রুহুল আমীন (ভারপ্রাপ্ত)- ১২/০১/০৮-০৭/০৩/১০।
৩২। জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত)- বি.এ.এম.এড- ০৮/০৩/১০- ৩০/০৭/২০১১
৩৩। জনাব রাম মোহন সেন – বি.এস.সি. অনার্স, এম. এস. সি, বি.এড, বি. সি. এস. (সাঃ শিক্ষা)- ৩১/০৭/২০১১…

বিদ্যালয়ের ভূমি সংক্রান্ত তথ্য: বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ভূমির অবস্থা জানা যায় না। মনে হয় খালি জায়গায় প্রাচীনকালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতীয়করণকালে জমির দালিলিক কাগজপত্র দেখা যায়। ১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের প্রস্তাব তৎকালীন D.D.P.Iবিদ্যালয় পরিচলনা কমিটিকে অবগত করেন। ১৯৬৯ সালের ৩-৯-৬৯ইং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ডি:ডি:পি: আই এর প্রস্তাবের পরিপ্রেÿÿতে জরম্নরী সভায় মিলিত হন। সভায় ১ম প্রস্তাবে ডি:ডি:পি: আইকে জাতীয়করণের প্রস্তাব প্রদানের জন্য ধন্যবাদ প্রদান করা হয় এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবে ডি:ডি:পি: আই এর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে সভায় গৃহীত হয়।

জাতীয়করণের পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডি:ডি:পি:আই সাহেবের মেমো নং- ৬৮২৫/৪-৫ তারিখ ১৯/০৮/১৯৬৯ইং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে জমি হস্তান্তরের জন্য আদেশ প্রদান করেন।

জমির তপশিল ছিল নিম্নরূপ:
বি,এস.খতিয়ান ও দাগ নম্বর এবং জমির পরিমাণ-
বি.এস খতিয়ান নং-১৫,
দাগ নং- ৩৬০০ = ২.৬০৫ একর
দাগ নং- ৩৭৮৫ = ৯.২২৫ একর
৩৬০১
মোট = ১১.৮৩০ একর
তবে বিদ্যালয়ে এতটুকু জমি নেই। কিছু জায়গা হয়তো বাইরে বেদখল রয়েছে।

বিদ্যালয়ের B.S রেকর্ড পত্রানুযায়ী ১১.৮৩ একর ভূমি থাকলেও বর্তমানে জমির পরিমাণ কমে গেছে। যা কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে উদ্ধার করা প্রয়োজন। কেননা এখন দুই শিফট চালু হয়েছে এবং আগামীতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে ছাত্রাবাস এবং শিক্ষক নিবাসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা, বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠাগারের কথা:
অত্র বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, সকল ধর্মীয় পুস্তক, প্রাচীন ভৌগলিক জ্ঞানের বই, ইংলিশ মিডিয়ামের প্রাচীন সকল বিষয়ের বই, উপন্যাস, রবীন্দ্র-নজরম্নল রচনাবলীসহ প্রচুর পুস্তক ভান্ডারে পূর্ণ অত্র পাঠাগার। অধিকন্তু রামু হাইস্কুলের প্রদত্ত প্রাচীন পুস্তকসহ বর্তমানে প্রায় ৮ হাজারাধিক পুস্তক রয়েছে পাঠাগারে।

শহীদ মিনার:
জাতীয়করণের পর বিদ্যালয়ের সঠিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন শিক্ষক জনাব সিরাজুল ইসলাম, জনাব সৈয়দ আহমদ প্রমুখ। বিদ্যালয়ের মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়, অত্র বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণরত শিক্ষক শহীদ শাহ আলম-বশির মিলনায়তন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শহীদ হয়েছিল।