১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের পহেলা জানুয়ারি তারিখে কক্সবাজার প্রিপারেটরি স্কুল নামকরণ করে এই বিদ্যালয় এর আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু হয় কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান শুরু হলেও এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক প্রস্তুতি বা আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম শুরু হয় ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় তৎকালীন পাবলিক লাইব্রেরি কক্ষে 965 খ্রীষ্টাব্দের ২৫ জুন বিকাল ৫ টায়। মহকুমা প্রশাসন সোলাইমান আলী টি. কে. (সিএসপি) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও টাউন কমিটি চেয়ারম্যান স. আ. ম. শামসুল হুদা চৌধুরী, বিমান ব্যবস্থাপক ইয়াকুব আল, বিশিষ্ট আইনজীবী আবু আহমেদ চৌধুর, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জে. সিবনিক, বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট জ্যোতিস্বর চক্রবর্তী, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ এস এ চৌধুরী, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন), মহকুমা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কক্সবাজার কলেজের অধ্যক্ষ এস. হক। এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে মহকুমা প্রশাসক সোলাইমান আলীকে এবং সম্পাদক হিসেবে শামসুল হুদা চৌধুরী কে দায়িত্ব দেয়া হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার মহকুমা আদালতের মুনসেফ, অ্যাডভোকেট জ্যোতিস্বর চক্রবর্তী, অধ্যক্ষ এস. হক ডাঃ এস. এ. চৌধুরী, মহকুমা শিক্ষক কর্মকর্তা, অ্যাডভোকেট আবু আহমেদ, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী(মেম্বার অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তান অ্যাসেম্বলি), ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, এমডি রাশেদ বি.এ. ও এম এস আলম। কমিটির প্রচেষ্টায় তৎকালীন সরকারের পক্ষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক তার স্মারক ২৮০৪/স তারিখ ২৭/০৮/১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ২.১৬ একর জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেয়। যার বন্দোবস্তি এল.টি মামলা নং ২৪/৬৫-৬৬।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৭০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত একটি বিশেষায়িত বিদ্যালয় হিসেবে অধিকারী ছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার সন্তান-সন্তুতি ছাড়া অন্য কেউ পড়ার সুযোগ পেত না এই স্কুলে। বর্তমানে তখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই দেশে ও বিদেশে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। বিদ্যালয় এর সার্বজনীন রূপ দেয়ার লক্ষ্যে তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি কক্সবাজার পৌরসভা কে হস্তান্তর করেন। তৎকালীন কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও মহকুমা প্রশাসক ওমর ফারুক সিএসপি (স্বারক নং ৪৬ শিক্ষ) তারিখ ০৭/০৯/১৯৭২ বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। সেই থেকে অদ্যবধি কক্সবাজার পৌরসভা বিদ্যালয়ের দায়ভার সহ পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি নিম্নমাধ্যমিক হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয় থেকে প্রথম ব্যাচ এস.এস.সি. পরীক্ষায় অংশ নেয়। বর্তমানে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায়শিক্ষা বিভাগ চালু আছে। ২০১০ সালে সরকার প্রদত্ত কম্পিউটার ও ২০১২ সালে তুর্কি সরকারের সহযোগিতায় অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়। জেলার সকল সরকারি বেসরকারি সংস্থা সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ চলে আসছে উক্ত ল্যাবে। কক্সবাজার পৌরসভা কতৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজার বেকার যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৩ মাসব্যাপি অফিস ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু আছে এই ল্যাবে। কক্সবাজারের সকল যুব সমাজ এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারে। প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক এই বিদ্যালয়ে। পড়াশোনার মান আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে একজন তরুণ মেধাবী, উদ্যোগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে পাঠদানে নিয়োজিত আছেন। শুধুমাত্র পড়ালেখাই নয় পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, স্কাউটিং, রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

(তথ্যসূত্রঃ গৌরবের ৫০ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘স্মৃতি’ থেকে প্রাপ্ত। সহযোগিতায় মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন)